
‘আমার ব্যাটাক আনি দ্যাও। আমার আত্মা ঠান্ডা হোক। নাতে (তা নাহলে) আমি মরি যামু।’ কাঁদতে কাঁদতে কথাগুলো বলছিলেন রৌমারী উপজেলার দাঁতভাঙা এলাকায় বিএসএফের গুলিতে নিহত বাংলাদেশি যুবক ফরিদুল ইসলামের মা ফরিতন বেওয়া।
ছেলেকে হারিয়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন তিনি। মৃত্যুর এক সপ্তাহ পার হলেও নিহত ফরিদুলের মরদেহ ফেরত পায়নি তার পরিবার। ফরিদের এই অকাল মৃত্যুতে পরিবার, আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে নেমে এসেছে শোকের ছায়া।
গত ১৩ ফেব্রুয়ারি ভোরে উপজেলার পূর্ব কাউয়ারচর সীমান্ত পিলারের কাছে বিএসএফের গুলিতে নিহত হন ফরিদুল। বিএসএফ সদস্যরা পরে তার মরদেহ নিয়ে যান। ফরিদুলের বাড়ি উপজেলার দাঁতভাঙা ইউনিয়নের হরিণধরা গ্রামে।
এর মধ্যে গত বুধবার ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশটির আসাম রাজ্যের মানকারচর থানা এলাকার একটি কবরস্থানে ইসলামী রীতি মেনে ফরিদুলকে দাফন করা হয়েছে। ছেলের মরদেহের অপেক্ষায় থাকা ফরিতন বেওয়া বলেন, ‘একবারের জন্য হলেও ব্যাটার মুখটা দ্যাখান তোমরা।’
স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, বিজিবি ও বিএসএফের মধ্যে সমঝোতা না হওয়ায় ঘটনার তিন দিন পর অজ্ঞাতপরিচয়ে ভারতে ফরিদুলকে দাফন করা হয়েছে। পরিবার ও জনপ্রতিনিধিরা লাশ ফেরত আনতে বিজিবির কাছে কয়েক দফায় আবেদন জানালেও তারা এ বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নেয়নি। ফরিদুলের বড় বোন মর্জিনা খাতুন বলেন, ভাইকে হারিয়ে মা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন।
খাওয়া-দাওয়া ছেড়ে দিয়েছেন। শুধু ফরিদুলকে দেখতে চান আর সারা দিন কান্নাকাটি করেন। তিনি অভিযোগ করে বলেন, আমরা গরিব মানুষ। বিজিবি আমাদের কথার গুরুত্ব দেয় না। ভাইয়ের লাশটা ফেরত চেয়ে অনেকবার বিজিবিকে অনুরোধ করেছি; কিন্তু এ ব্যাপারে তারা কোনো কথা বলে না।
দাঁতভাঙা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান রেজাউল করিম বলেন, লাশ ফেরত আনার বিষয়ে উদ্যোগ নিতে বিজিবিকে অনেকবার বলা হয়েছে। এরপর ফেসবুকের মাধ্যমে জানতে পারি, বুধবার ভারতের একটি কবরস্থানে ফরিদুলের লাশ দাফন করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে বিজিবি জামালপুর-৩৫ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোন্তাসির মামুনের মোবাইল নম্বরে কল করা হলেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। বিজিবির দাঁতভাঙা কোম্পানি কমান্ডার সুবেদার ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘আমি এ ক্যাম্পে শনিবার এসেছি। এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না।’
Leave a Reply