
রাতভর ডা’কাতি হওয়া সোনার তরী পরিবহনের সব যাত্রীর চোখ বাঁ’ধা থাকলেও সেলিম নামের এক যাত্রীর চোখ খোলা রেখেছিলো ডা’কাত দলের সদস্যরা। পুরো রাস্তা তাকে দিয়ে হেল্পারি করানো হয়। এসময় নিজের চোখে ওই বাসে দুই তরুণীর সর্বনাশ হতে দেখেছেন তিনি। বাসের যাত্রীদের সঙ্গে সেই রাতে কি হয়েছিলো, সেই বর্ণনা ত’দন্ত সংশ্লিষ্টদের জানিয়েছেন সেলিম।
সোনার তরী বাসের মূল চালক পাভেল জানান, গত ১৪ জানুয়ারি বিকেল ৫টার দিকে ৩৫জন যাত্রি নিয়ে তিনি বগুড়া থেকে বাস ছাড়েন। এরপর শেরপুর থেকে আরো তিন যাত্রি নেন। বাসটি রাত ৮টার দিকে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গায় পৌঁছালে ৭ জন যাত্রি ওঠেন। পৌঁনে ১০টার দিকে বাসটি সাভা’রের নবীনগর পৌঁছালে আরো এক যাত্রি ওঠেন। এরমাঝে বিভিন্ন স্থানে তিনি যাত্রিদের নামানও।
সবশেষে ২০ থেকে ২২ জন যাত্রী নিয়ে তিনি সাভা’র পার হওয়ার পরপরই ডা’কাতরা আক্রমন করে বসে। তারা বাসের নিয়ন্ত্রণ নেন এবং চোখমুখ বেঁধে পেছনের সিটে বসিয়ে রাখেন পাভেল ও তার সঙ্গে থাকা বাসের হেল্পারকে। অনেক মা’রধরের এক পর্যায়ে তিনি জ্ঞান হারান। কিন্তু ওই বাসে সেলিম নামে এক যাত্রির চোখমুখ বাঁ’ধা ছাড়াই ছিলেন।
পাভেলের কাছ থেকে এমন তথ্য পেয়ে সেলিম নামের ওই যাত্রীর সন্ধান শুরু করে গোয়েন্দা পু’লিশ। টানা দুই দিনের চেষ্টায় অবশেষে তার সন্ধান মেলে। ডা’কাতির ঘটনা বর্ণনা দিয়ে ত’দন্ত সংশ্লিষ্টদের সেলিম জানান, গাবতলীর কাছাকাছি পৌঁছালেই ডা’কাতরা বাস ঘুরিয়ে আবার সাভা’রের দিকে চলতে থাকে।
এসময় ওই বাসে থাকা দুই তরুণীকে ধ’র্ষণ করা হয়। এদেরমধ্যে এক তরুণীর মা ও অন্যজনের ভাই সঙ্গে ছিলো। পরে তাদের চান্দুরায় নামিয়ে দেওয়া হয়। তারা ডা’কাতি শেষে সাভা’র থেকে বাসটি ঘুরিয়ে আবারও টাঙ্গাইলের দিকে যায়। এরপর সেখান থেকে একটি তেল বোঝাই ট্রাক ছিনতাই করে।
নিজের চোখ না বাঁ’ধার কারণ হিসেবে সেলিম জানান, অ’জ্ঞাত কারণে ডা’কাতরা তাকে মুক্ত রেখেছিলো। তাকে দিয়ে হেল্পারের মত কাজ করিয়েছে। এ ঘটনার পর তাকে দফায় দফায় ঢাকা মহানগর ডিবি কার্যালয়ে ডেকে পাঠানো হয়েছে। তিনি সাবইকে সত্য ঘটনা বলেছেন এবং ডা’কাতদের সনাক্ত করেছেন। ডিবি কার্যালয়ে ওই ডা’কাতরা ধ’র্ষণের কথা স্বীকারও করেছে।
এ ধরনের ৭টি ঘটনার এ পর্যন্ত ৩৭ জনকে গ্রে’প্তার করা হয়েছে। চাঞ্চল্যকর এমন বাস ডা’কাতির পর ঢাকা মহাগর গোয়েন্দা পু’লিশের সঙ্গে বৈঠকে বসেন ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি হাবিবুর রহমানসহ উর্দ্ধতনরা। সেখানে রেঞ্জের এসপি ও ওসিরাও উপস্থিত ছিলেন। এ ধরণের ঘটনা রোধে সেখানে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়। একই সঙ্গে ডা’কাতির পর মা’মলা না নেওয়ার অ’ভিযোগ পাওয়া গেলে তাৎক্ষনিক শা’স্তির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।পাশাপাশি ডা’কাতি রোধে তথ্য আদান-প্রদানের কথাও বলা হয়েছে।
বাস ডা’কাতির মা’মলার ত’দন্ত অগ্রগতি নিয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পু’লিশের অ’তিরিক্ত-উপ পু’লিশ কমিশনার শাহাদাত হোসেন বলেন, গত ১৪ জানুয়ারি সোনার তরী বাসটি (ঢাকা মেট্রো-ব-১১-১৫০৫) বগুড়া থেকে ছেড়ে আসার পর টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা থেকে ডা’কাত দলের সদস্যরা বাসে ওঠেন। এরপর তারা বাসের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে যাত্রিদের মালামাল কেড়ে নেন। এক পর্যায়ে ওই বাসে থাকা ২ তরুণীকে ধ’র্ষণ করা হয় বলে গ্রে’প্তার ডা’কাত দলের সদস্যরা জানিয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে ওই দুই তরুনীর সন্ধান করা হচ্ছে।
এরআগে, গত ১৪ জানুয়ারি থেকে ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সাভা’র থা’নায় দুটি এবং তুরাগ, উত্তরা পশ্চিম, টাঙ্গাইল সদর, মির্জা’পুর ও আশুলিয়ায় একটি করে ৭টি ডা’কাতি মা’মলা দায়ের হয়। সবগুলোই ছিলো বাস ডা’কাতি। এরমধ্যে ডা’কাতের কবলে পড়া টাঙ্গাইলের ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতা’লের আবাসিক মেডিকেল কর্মক’র্তা (আরএমও) ডা. শফিকুল ইস’লাম সজীবও ছিলেন।
তিনি প্রা’ণে বেঁচে ফিরলেও চোখ বেঁধে রাতভর তাকে বেদম পে’টায় ডা’কাত দলের সদস্যরা। এ ঘটনার পর তিনি থা’নায় গিয়ে মা’মলা করতে না পেরে ফেইসবুকে একটি পোস্ট দেন। মুহূর্তেই তা ভাই’রাল হয়ে যায়। এরপর আইজিপির নির্দেশে মা’মলার ত’দন্তে নামে ঢাকা মেহানগর গোয়েন্দা পু’লিশ।
Leave a Reply