
লতা মঙ্গেশকর আর আশা ভোঁসলে দুটি নামই সংগীতাঙ্গনে জ্বলজ্বল করবে চিরকাল। তাদের ছাড়া গানের দুনিয়া যেন কল্পনাই করা যায় না। এই দুইজনের আরও একটি পরিচয় তারা সম্পর্কে বোন। তবে অনেকেই ধারনা করেন বনিবনা ছিল না দুই বোন লতা আর আশার। তাদের নিয়ে অনেক বিতর্কও রয়েছে। এছাড়া তাদের সম্পর্ক নিয়েও বিভিন্ন সময়ে সংবাদমাধ্যমে এসেছে নানা তথ্য। আশার বিয়েকে কেন্দ্র করে একটা সময় বড় বোন লতার সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়।
আশা তখন অদম্য কিশোরী। না বোঝার বয়স। প্রেমে খাচ্ছেন হাবুডুবু। তার চেয়ে ১৫ বছরের বড় গনপত রাও ভোসলেকে বাড়ি থেকে পালিয়ে বিয়ে করেন। ম্যানেজারের গনপতকে বিয়ে করায় আশার সঙ্গে কথা বলা বন্ধ করে দেন লতা।
চার বছরের ছোট যে বোনের জন্য তার লেখাপড়া হলো না, সংসারের খারাপ সময়ে সেই বোন কিনা স্বার্থপরের মতো নিজের সুখের ঠিকানা খুঁজতে গেল! বিয়েটাকে লতা দেখলেন আশার স্বার্থপরতা হিসেবে। তার ওপর গনপতকে ছোট বোনের স্বামী হিসেবেও মানতে পারছিলেন না লতা। তার ম্যানেজারের হাত ধরে আশা পালাতে পারেন, সেটা কোনো দিন স্বপ্নেও ভাবেননি।
অভিমানী লতা অনেক দিন কথা বলেননি আশার সঙ্গে। একসঙ্গে ডুয়েট গাইতে গিয়ে আশাকে যাতে দেখতে না হয়, সে জন্য ডান হাতে গানের খাতা নিয়ে মুখ সরিয়ে রাখেন। তিনি সেই বোন, একসময় মায়ের মতো তাকে বুকে আগলে রেখেছেন যিনি! কোলে করে নামার সময় সিঁড়ি থেকে পা পিছলে পড়ে যাওয়ার পরও যিনি কিনা বোনকে বুকে ধরে রেখেছিলেন, নিজের মাথা ফেটে রক্ত ঝরেছে, তবু আদরের বোন আশাকে ছাড়েননি!
যদিও লতা ও আশার দূরত্ব খুব বেশি দিন ছিল না। বয়সে অনেক বড় ও রক্ষণশীল পরিবারের ছেলে গনপতের সঙ্গে একদমই মিলত না। যখন পেটে সন্তান, তখন আশাকে ঘর থেকে বের করে দেওয়া হয়। দুঃখে-কষ্টে এক কাপড়ে ফিরলেন দিদির কাছেই। সেই দিন দিদি আর মুখ ফিরিয়ে রাখতে পারেননি। একত্রে পথ চলা…আবার তারা এক ঘরে থাকতে শুরু করলেন।
গনপত রাওয়ের সংসারে তো সুখ পাননি। সে জন্য অবশ্য প্রথম স্বামীকে দোষারোপ করেন না। বরং এখনো অকপটে তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতেই বলেন, তিনি তো আমায় তিনটি সন্তান দিয়েছেন! সন্তানেরাই আশাজির কাছে সব। তাদের মানুষ করতে পেরেছেন, শিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার বাইরে এটাকেই বড় সার্থকতা, অতুলনীয় সাফল্য মানেন।
Leave a Reply