
মো. তাসিব। বাড়ি চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার নলুয়া ইউনিয়নের মরফলা এলাকায়। বাবার নাম জসিম উদ্দিন। পড়তো একই এলাকার একটি উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণিতে। যার হাতে থাকতো বই, কাঁধে থাকতো ব্যাগ; মৃত্যুর মতো কঠিন বাস্তবতা বোঝার বয়স হয়নি যার, সেই ছোট্ট তাসিবকেই প্রাণ দিতে হয়েছে নির্বাচনী সহিংসতায়। সোমবার ইউপি নির্বাচন চলাকালে মরফলা বোর্ড অফিস কেন্দ্র এলাকায় একদল সন্ত্রাসীর হাতে নির্মমভাবে খুন হয় তাসিব।
জানা গেছে, ভোট চলাকালে কেন্দ্রের বাইরে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায় একদল সন্ত্রাসী। ওই সময় ভোটার ও কেন্দ্রের বাইরে জড়ো হওয়া লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ভোট দেখতে গিয়ে কেন্দ্রের বাইরে ছিল শিশু তাসিব। অন্যদের সঙ্গে তাসিবও দৌড়ে চলে যাচ্ছিল। কিন্তু একটি গাছের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে পড়ে যায় সে। তখন সন্ত্রাসীরা তাকে এলোপাতাড়ি কোপায়। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
ছোট্ট তাসিবের এমন নির্মম মৃত্যুতে পুরো এলাকাজুড়ে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। তার রেখে যাওয়া বই হাতে নিয়ে কাঁদছে বোন ইমু। পাশেই ছেলের ছবি বুকে নিয়ে বিলাপ করছেন মা সখিনা বেগম। মা-বোনকে কাঁদতে দেখে ভাই হারানোর বেদনা স্পর্শ করেছে ছোট বোন ইভাকেও। অশ্রুভেজা চোখে ফ্যালফ্যাল করে মা-বোনের দিকে তাকিয়ে রয়েছে শিশুটি।
বাঁশের ছাউনি আর টিন দিয়ে তৈরি তিন কক্ষের ঘরটির সামনের কক্ষে থাকতো তাসিব। তার সঙ্গে থাকতেন দাদা নুরুল ইসলাম। নাতির করুণ মৃত্যুতে মুর্ছা যাচ্ছেন দাদাও। তাসিবের প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করতেই বলেন, আমার নাতিরে এনে দেন। সে আমার সঙ্গে নামাজ পড়তে যেত। আমার সঙ্গে ঘুমাতো। আমি এখন কাকে নিয়ে ঘুমাবো?
ভোটের দিন দিনভর রিকশায় চেয়ারম্যান প্রার্থী লিয়াকতের ভোটারদের আনা-নেয়া করেছেন তাসিবের বাবা জসিম উদ্দিন। আর সেই লিয়াকতের অনুসারীদের রামদার কোপেই প্রাণ গেছে তার আদরের সন্তানের- এমন কথা ভাবতেই বারবার অজ্ঞান হচ্ছেন জসিম উদ্দিন। ঘরে গিয়ে দেখা গেল- অনেকটা অচেতন হয়ে খাটে পড়ে রয়েছেন তিনি।
ছেলের ছবি বুকে নিয়ে আহাজারি করছিলেন মা সখিনা বেগম। আর বিড়বিড় করে বলছিলেন, আমার ছেলেরে মারল কে? আমার বুক খালি করল কে?
এদিকে, এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে আটক করা হয়নি। তবে জড়িতদের শনাক্ত করে শিগগির আইনের আওতায় আনা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
Leave a Reply