
মৃ’ত্যুপথযাত্রী জবা আক্তারে দিন কাটছিল চরম হতাশা আর দুশ্চিন্তায়। প্রতি মাসে কাড়ি কাড়ি টাকা খরচ, তারপর সুস্থ হওয়ার নিশ্চয়তা নেই। এমনকি কয়েকদিন পর পর এত টাকা খরচ করার সাম’র্থও নেই পরিবারের। সেই জবাকেই বিয়ে করে উদাহ’রণ সৃষ্টি করলেন ওমানপ্রবাসী ইসমাইল সাহরাজ। তাদের এই গল্প সৃষ্টি করেছে উদাহ’রণ।
শায়েস্তাগঞ্জ নর্থ ইস্ট আইডিয়াল টেকনিক্যাল কলেজের সিভিল ডিপ্লোমা দ্বিতীয় বর্ষের ছা’ত্রী জবা আক্তার বোনম্যারো ক্যান্সারে আ’ক্রান্ত। ২০১৭ সালে কলেজে পরিচয় হওয়ার পর ইসমাইলের সঙ্গে তার প্রে’মের স’ম্পর্ক গড়ে ওঠে। কিন্তু বোনম্যারো ক্যান্সার হলে জবা সে স’ম্পর্ক থেকে সরে যান।
হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজে’লার পারকুল গ্রামের আব্দুল গফুরের সন্তান ইসমাইল শাহবাজ ৫ বছর যাবৎ ওমানে থাকেন। গত জানুয়ারি মাসে তার বাবারা দুর্ঘ’টনার খবর শুনে দেশে আসেন। এদিকে একই উপজে’লার উত্তর আমকান্দি গ্রামের আমীর আলীর (জবার বাবা) সৌদিপ্রবাসী হলেও আর্থিক অবস্থা ভালো না। তাই মে’য়ের যথাযথ চিকিৎসাও করাতে পারছিলেন না।
জবার বিষয়টি নজরে আসে চুনারুঘাটের সাংস্কৃতিক সংগঠন ধামালীর সভাপতি অ্যাডভোকেট মোস্তাক আহমেদের। তিনি জবা আক্তারের বিষয়টি নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দিলে লন্ডনপ্রবাসী মামুন চৌধুরীসহ অনেকেই এগিয়ে আসেন। তাকে ভা’রতে নিয়ে দুবার চিকিৎসা করানো হয়। এখনও মাসে ১০/১২ হাজার টাকা খরচ হয় তার চিকিৎসার। মাঝে মাঝে র’ক্তও দিতে হয়।
অ্যাডভোকেট মোস্তাক আহমেদ জবা আক্তারের চিকিৎসার বিষয়টি দেখভাল করেন জানতে পেরে ইসমাইল সাহবাজ তার কাছে গিয়ে জবা আক্তারকে বিয়ের প্রস্তাব দেন এবং জবার চিকিৎসা খরচও বহন করবেন বলে জানান। পরে অ্যাডভোকেট মোস্তাক উভ’য় পক্ষের মুরব্বিদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে বিয়ের আয়োজন করেন।
রোববার দুপুরে উত্তর আমকান্দি গ্রামে জবা আক্তারের বাড়িতে আয়োজন করা হয় আকদ অনুষ্ঠানের। সেখানে আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে হয় তাদের। অ্যাডভোকেট মোস্তাক আহমেদ ফেসবুকে জবা আক্তার ও ইসমাইল শাহবাজের বিয়ের খবর ও ছবি পোস্ট করলে মুহূর্তের মাঝেই তা ভাই’রাল হয়।
জবা বলেন, যেখানে নিজের বেঁচে থাকা’টাই অনিশ্চিত সেখানে হাতে মেহেদী লাগিয়ে বধূ সাজবে তা ছিল কল্পনাবিলাস। কিন্তু ইসমাইল সাহবাজ সবকিছু জেনে শুনে এই বিয়ে করায় আজ আমা’র আনন্দের সীমা নেই। এটি আমা’র জীবনের শ্রেষ্ঠ মুহূর্ত।
ইসমাইল সাহবাজ বলেন, একজন মানুষ কেন এত আক্ষেপ নিয়ে পৃথিবী থেকে বিদায় নেবে- এ চিন্তা থেকেই আমি বিয়ে করেছি। সবকিছু ভেবেই করেছি। আমি ওমানে থেকে যা উপার্জন করি তা থেকে জবার চিকিৎসার জন্য মাসে ১০/১২ হাজার টাকা ব্যয় করলে কোনো সমস্যা হবে না; ইনশাআল্লাহ।
তিনি আরো বলেন, প্রথমে আমা’র পরিবারের লোকজন মানতে চায়নি। পরে সবাইকে বোঝালে তারা রাজি হন এবং বিয়েতে অংশগ্রহণ করেন।
হবিগঞ্জের জে’লা প্রশাসক ইশরাত জাহান বলেন, এ বিয়ে উদারতা ও মানবিকতার অনন্য উদাহ’রণ। আমি এ দম্পত্তির মঙ্গল কামনা করি। বিয়েটি সমাজে একটি অনন্য উদাহ’রণ সৃষ্টি করল।
Leave a Reply