
খেলা শেষে মাঠে দাঁড়িয়ে গ্যালারির দর্শকদের জয়োৎসবের ভিডিও করছিলাম। এমন সময় কাঁধে একটা হাত। ঘুরে তাকাতেই ডমিনিকার এক সাংবাদিক হেসে উঠে বললেন, ‘এ জন্যই তোমাকে বারবার ডমিনিকা আসতে হবে। এখানে ক্রিকেট মানেই অন্যরকম একটা ব্যাপার। সব জায়গায় এটা পাবে না।’
আসলেই তাই। সিরিজে এখনো এক ম্যাচ বাকি। বাংলাদেশ নিশ্চয়ই চাইবে ৭ জুলাই গায়ানার শেষ ম্যাচ জিতে টি–টোয়েন্টি সিরিজটা অন্তত ড্র করতে। কিন্তু ডমিনিকার আবহ ভিন্ন। পাঁচ বছর পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ফিরেছে বলেই শুধু নয়, এই দ্বীপের মানুষের কাছে বড় দিন আর থার্টি ফাস্ট নাইটের মতো ক্রিকেটও একটা মহাউৎসব। খেলা হলেই হলো, মাঠে মানুষের ঢল নামবে।
বাংলাদেশকে ১৫৮ রানে আটকে রেখে ৩ রানে জিতেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ
আর সেই খেলায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ জিতে গেলে কী হতে পারে ভাবুন। ম্যাচ শেষ হওয়ার এক দেড় ঘন্টা পরও লাউড স্পিকারে মিউজিক থামছিল না। দর্শকরা মাঠ ছাড়ছিলেন ঢোল–বাদ্যি বাজিয়ে, নেচে গেয়ে। ডমিনিকায় ক্রিকেট মানেই যে উৎসব। উইন্ডসর পার্কের দ্বিতীয় টি–টোয়েন্টিতে কাল ওয়েস্ট ইন্ডিজের ৩৫ রানের জয় সেই উৎসবে বাড়তি রং চড়িয়েছে স্বাভাবিকভাবেই।
বাংলাদেশ অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহর সূত্র অবশ্য বলছে, বোলিংটা যদি আরেকটু ভালো হতো, সাকিবের মতো যদি অন্তত আর একজন ব্যাটসম্যান দাঁড়িয়ে যেতে পারতেন, ফলাফল উল্টো হলেও হতে পারত। ম্যাচ শেষের সংবাদ সম্মেলনে টি–টোয়েন্টি অধিনায়কের কথায় প্রকাশ পেয়েছে এই দুই আফসোসই।
সিরিজে পিছিয়ে গেছে বাংলাদেশটুইটার
মাহমুদউল্লাহ বলছিলেন, ‘সাকিব খুবই ভালো ব্যাটিং করেছে। তবে বোলিংয়ে সম্ভবত আমরা কয়েকটা ওভারে বেশি রান দিয়ে ফেলেছি। আফিফ–সাকিবের জুটিটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল, যেটা আমাদের একটা মোমেন্টাম দিয়েছিল। শেষ দিকে সাকিব পরপর কয়েকটা বাউন্ডারি মারল। তারপরও বোলিংটা যদি আমরা আরেকটু ভালো করতে পারতাম, লক্ষ্যটা যদি আরেকটু কম হতো তাহলে হয়তো আমাদের জন্য ভালো হতো।’
টি–টোয়েন্টিতে দুই একটা ওভার একটু ব্যয়বহুল হয়ে যাওয়াটা অস্বাভাবিক নয়। তবে অধিনায়কের হতাশাটা বেশি পরিকল্পনা অনুযায়ী বোলিং করতে না পারায়, ‘আমরা যেখানে বল করতে চেয়েছি, সেখানে বল করতে পারিনি। পরিকল্পনা অনুয়ায়ী বোলিং হয়নি।’
ব্যাটিংয়েও শুরু ভালো হয়নি বাংলাদেশের। ৮ রানে দুই ওপেনারকে হারানোর পর দলকে ২৩ রানে রেখে ফিরে যান অধিনায়ক নিজেও। ‘১৯০ রান যখন তাড়া করবেন তখন ভালো একটা শুরু খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু ওখানেই আমরা কিছুটা পিছিয়ে পড়ি’—ম্যাচ শেষে বলেছেন মাহমুদউল্লাহ।
৩৫ রানে হেরে সিরিজে পিছিয়ে গেল বাংলাদেশ
ম্যাচের আগে পিঠে ব্যথা অনুভব করায় কাল দ্বিতীয় টি–টোয়েন্টিতে খেলতে পারেননি ওপেনার মুনিম শাহরিয়ার। প্রথম ম্যাচে চারে খেলা লিটন দাসকেই তাই আবার এনামুল হকের সঙ্গে ফিরতে হয়েছে ওপেনিংয়ে। কিন্তু ৫ রান করে আউট হয়ে যান লিটন।
মাহমুদউল্লাহ অবশ্য মনে করেন দলের প্রয়োজনে লিটনের যে কোনো জায়গায় খেলারই সামর্থ্য আছে, ‘লিটন আমাদের সেরা ব্যাটসম্যান। আপনি সবসময় চাইবেন আপনার সেরা ব্যাটসম্যানকে সমর্থন দিতে। লিটন টেস্ট, ওয়ানডেতে খুবই ভালো ব্যাটিং করছে, ধারাবাহিকতা ধরে রেখে খেলছে। টি–টোয়েন্টিতে হয়তো সেটা পারছে না। তবে সে আমাদের সেরা ব্যাটস্যাম্যান। টি–টোয়েন্টিতে যে কোনো ব্যাটসম্যানের যে কোনো জায়গায় ব্যাটিং করার সামর্থ্য থাকতে হবে এবং লিটনের সেটা আছে।’
ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর দিয়েই জাতীয় দলে ফিরেছেন এনামুল
তামিম ইকবালের অনুপস্থিতিতে টি–টোয়েন্টির ওপেনিং জুটিটা চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশের জন্য। বিশ্বকাপের আগে ওপেনিং নিয়ে পরীক্ষা–নিরীক্ষার সেটাও একটা কারণ। মাহমুদউল্লাহ বলছিলেন, ‘যেহেতু ওপেনিংয়ে আমরা ধারাবাহিক পারফরম্যান্স পাচ্ছি না সে জন্য একটু অদল–বদল অনেক সময় হতেই পারে। আমার মনে হয় দল হিসাবে আমরা ভালো খেলতে পারছি না। সেটারই প্রভাব পড়ছে সবকিছুতে।’
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে অন্তত বোলিংটা ভালো হয়েছিল। টি–টোয়েন্টিতে এসে সেটিও পারেনি সময়ের দাবি মেটাতে। আরেকটু ভালো ব্যাটিংয়ের সঙ্গে মাহমুদউল্লাহর আফসোস তাই আরেকটু ভালো বোলিংয়ের জন্যও।
Leave a Reply